Friday, June 13, 2025
Glorious Extra is an E-Learning Platform
Homeআন্তর্জাতিকভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়ছে: ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদন

ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়ছে: ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের স্বাধীন প্যানেল ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে, বিশেষ করে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদনে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, সহিংসতা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ভুল তথ্য প্রচার করেছে।

বিশেষভাবে মোদির একটি বক্তব্যের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, “মুসলিমরা বেশি বেশি সন্তান নেন”, যা মুসলিমদের ‘‘অনুপ্রবেশকারী’’ হিসেবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টার অংশ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংস আচরণের প্রসঙ্গ টেনে দেশটিকে “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” (Country of Particular Concern) হিসাবে মনোনীত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, র-এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদব ও গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে ভারতকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এক নেতাকে হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টার ঘটনায় বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

ভারত অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, বিদেশে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা চেষ্টার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং ভারত মনে করে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ইস্যুগুলো অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। যদিও ইউএসসিআইআরএফ ভারতকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করলেও, এই সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের কথা উল্লেখ করেছে। তবে ভারত এসব প্রতিবেদনকে “অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট” বলে অভিহিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমাদের সরকারের বিদ্যুৎ ও ভর্তুকির মতো প্রকল্পগুলো সকল সম্প্রদায়কে সমানভাবে সহায়তা করে।”

ইউএসসিআইআরএফের সুপারিশের ফলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, যদিও ভারতকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। র-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হলেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের ভূকৌশলগত স্বার্থের ওপর।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments