দেশের ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য ১৩ হাজার ২২২ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিচালন অর্থাৎ রাজস্ব খাতে। এ ছাড়া এবার গবেষণা খাতে মাত্র দুই কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন করেছিল ইউজিসি। এর মধ্যে সরকারের অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করা হয়। এছাড়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে অর্জিত রাজস্ব আয় ধরা হয় ১ হাজার ২৭২ কোটি ৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে ৩১টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার ইউজিসির বাজেট ম্যানেজমেন্ট কমিটির (বিএমসি) সভায় এ বাজেট উত্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ফাইন্যান্স কমিটিতে (এফসি) পুনরায় এ বাজেট উত্থাপন করা হবে। সবশেষ ইউজিসির পূর্ণ কমিশন সভায় ২০২৫-২৬ অর্খবছরের বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সে জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা যে বাজেট চাচ্ছি, সেটিই যেন দেওয়া হয় সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবো। শিগগিরই বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।’
ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ১৩ হাজার ২২২ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ১৯৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিচালন বাজেট। আর উন্নয়ন বাজেট ৬ হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পরিচালন বাজেটের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৬২ কোটি ৬০ লাখ সরকার দেবে। অবশিষ্ট এক হাজার ৩৩৬ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আয় থেকে আসবে। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে জিওবি ৫ হাজার ৩৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৬৩৯ কোটি টাকা এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে পাওয়া যাবে।’
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয় ইউজিসির মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের আর্থিক চাহিদার বিষয়টি কমিশনকে প্রস্তাব আকারে জানায়। পরবর্তীতে কমিশন প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে বাজেট প্রণয়ন করে।
গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ছে দুই কোটি
আগামী অর্থ বছরে মূল বাজেট দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়লেও গবেষণায় বেড়েছে মাত্র দুই কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরে গবেষণায় বরাদ্দ ১৮৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থ বছরে যা বাড়িয়ে প্রায় ১৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
গবেষণায় মাত্র দুই কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় তেমন অর্থ খরচ করতে পারে না। সেজন্য এবার দুই কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ঢাবিতে
গত কয়েক বছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ঢাবির জন্য কত টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি জানা না গেলেও প্রায় ৯০০ কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।